• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার  অভয়নগরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ অভয়নগরে সরকারীভাবে ধান চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অভয়নগরে মেধা অন্বেষন ও কুইজ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত অভয়নগরে দুদক কর্তৃক সততা স্টোরের অর্থ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ আশুলিয়া টু চান্দুরা চৌরাস্তা যানজটের দুর্ভোগ,,,  অভয়নগরে মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সংবর্ধনা যশোর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)অভিযান চালিয়ে ৪ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার সহ আটক -১ অভয়নগরে পায়রাহাট ইউনাইটেড কলেজ শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি অর্জনে আনন্দ শোভাযাত্রা নড়াইলের ইউপি চেয়ারম্যান  মোস্তফা কামাল’কে গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক -৪ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার আশুলিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ছয় জনের মরদেহ উদ্ধার ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যা বললেন মামুনুল হক যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ খেলা হচ্ছে না তাসকিনের, বিকল্প ভাবনায় হাসান দুই সিনেমা নিয়ে ফিরছেন আফরান নিশো

দক্ষিণবঙ্গের ভাগ্য পরিবর্তন

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সঙ্গে এগিয়ে যাবে দেশও

নিজস্ব প্রতিবেদক : বহুল প্রত্যাশিত বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৬ লেনের দৃষ্টি নন্দন হাইওয়ে চালুর ফলে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্য ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ৬ লেন এক্সপ্রেস সড়কটি চালুর ফলে কম সময়ে যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠছে শিল্প-কলকারখানা।
এ বছর জুন মাসে পদ্মা সেতু ও রেলপথ চালুর হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান, বেকার সমস্যা হ্রাস, দারিদ্র বিমোচন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ অত্র এলাকায় শুরু হবে। বর্তমানে শিল্প, কল-কারখানার মালিকসহ অনেক ব্যবসায়ী জায়গা কেনার ফলে এলাকার জায়গা-জমির দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল ৩ বিভাগের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সহজ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে মালামাল ক্রয় করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারছে। পদ্মা সেতু ও রেল সড়ক চালু হলে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর, বেনাপোল বন্দর, মোংলা পোর্ট ও ভোলা বন্দরের সঙ্গে মালামাল নেওয়া-আনা খুবই সহজ ও সময় সাশ্রয় হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক দৃষ্টি নন্দন ৬ লেনের হাইওয়ে এক্সপ্রেস দেখতে ভিড় করছেন। পর্যটন কেন্দ্রে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় খুব সহজে ও কম সময়ে পৌঁছাতে পারবে। প্রতিটি সেক্টরে এখনই ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।
ভাঙ্গার স্থানীয় আতাদী গ্রামের বাসিন্দা ও ফরিদপুরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খালেদ বলেন, আমাদের ঢাকা যেতে এখন কমপক্ষে ২ ঘণ্টা লাগে। আর পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা যেতে সময়ে লাগবে মাত্র ১ ঘণ্টা। দক্ষিণবঙ্গের অনেক লোক এখন ঢাকা বাসা ভাড়া করে না থেকে, গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় অফিস করতে পারবে। তাছাড়া এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
ভাঙ্গা পৌর মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা জানান, প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গা পৌর এলাকা ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। এখন আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা নয়, ভাঙ্গার চেহারা পাল্টে এখন হয়েছে সিঙ্গাপুর সিটি। জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণ করায় আমরা ভাঙ্গাবাসীসহ দক্ষিণবঙ্গের মানুষ খুবই আনন্দিত। আমাদের অত্র এলাকার মানুষের ভাগ্যেরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।
ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। পদ্মা সেতু, রেল সড়ক ও ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে ফরিদপুর জেলাসহ দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অত্র এলাকাসহ এই বঙ্গের কোনো বেকার যুবক থাকবে না। এখনই উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছি। ঢাকা থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা হওয়ায় বর্তমানে শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা জায়গা কিনছে। ৬ লেনের রাস্তার কারণে এলাকার জায়গা-জমির দাম অনেক বেড়ে গেছে।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিমউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত হাইওয়ে এক্সপ্রেস বা ৬ লাইনের রাস্তা হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা কমে যাওয়ায় মানুষের জান-মালের ক্ষতি কমে গেছে। এখন ঢাকা যেতে ২ ঘণ্টা সময়ে লাগে, পদ্মা সেতু চালু হলে মাত্র ১ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছানো যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নত হবে। এছাড়া এখানে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক যে সম্ভাবনা; তার দ্বার উন্মোচিত হবে।
ইউএনও বলেন, বঙ্গবন্ধু মানমন্দিরের কাজ শুরু হয়েছে। তখন অত্র এলাকা পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে উঠবে। এতে বিশ্ব দরবারের বাংলাদেশ তথা ফরিদপুরের ভাঙ্গার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতুর বদৌলতে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হবে। বড় বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা এখনে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। ফলে ফরিদপুরের বহু শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ভাঙ্গায় একটি ট্রাফিক জোন করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এছাড়া শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে সেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ব্যাপারে সুপারিশ করা যেতে পারে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, একটা জায়গার উন্নয়নের প্রধান স্তম্ভ হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেদিক থেকে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ভাঙ্গায় অনেক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানে ক্রীড়া কমপ্লেক্স, ইকোনমিক জোন, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রসহ একটি বিমানবন্দর করতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে অনেক ব্যবসায়ীক উদ্যোক্তা শিল্পকারখানা এখানে গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।
পদ্মা সেতু ও হাইওয়ে এক্সপ্রেস: ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ছয় লেনের ৫৫ কিলোমিটার সড়কে রয়েছে ৩টি বড় সেতুসহ ২৫টি সেতু, ২৩টি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডার পাস, ৫৪টি কালর্ভাট, ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস, পদ্মা সেতুর ২টি টোলপ্লাজাসহ রয়েছে ৪টি টোলপ্লাজা। পাল্টে গেছে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সংযোগ স্থান ভাঙ্গা বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চেহারা। এখানে ফ্লাইওভার ও গোলচত্বর নির্মাণ করতে ৬ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে দৃষ্টি নন্দন গোল চত্বরটি তৈরি করেছে। সড়কে গাড়ি চলাচলে থাকবেনা কোনো সিগনাল বা ট্রাফিক জ্যাম। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে বেশ কয়েকটি বাস স্টপেজ।
এছাড়া ছোট ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য মহাসড়কের দুই পাশে ৫ মিটার এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মূল দুই রাস্তার মাঝখানে ৫ মিটার অতিরিক্ত রাস্তা রয়েছে। ভবিষ্যতে ৫ মিটার রাস্তাটি মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে এই ৫ মিটারের দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পটি প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরবর্তীতে আরো দুটি প্রকল্প যোগ হওয়াতে সবমিলিয়ে মোট ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা। ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরে স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন এসডব্লিউও (পশ্চিম)।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হচ্ছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেস হাইওয়ে। নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রালয়ের অধীনে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করলে টোল দিতে হবে সব ধরনের যানবাহনকে। গাড়ি চলাচলে কোনো সিগন্যাল, ট্রাফিক জ্যাম বা ক্রসিং থাকবে না। এই এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং কাঁঠালবাড়ীর পাঁচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ দুইটি প্যাকেজে সম্পন্ন হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.